চিরকুমার দুধভাই চটি গল্প

কাছের বন্ধু, ক্লাসমেট, পাড়াতো সমবয়েসী একে একে সবাই সেরে ফেলেছে। বেচারা একা একা ঘুরে বেড়ায়। আকাশ দেখে। খালপাড়ে গিয়ে নির্জন বিকেলে ঘাস ছিঁড়ে। বসে বসে কী সব ভাবে। বন্ধুদের সঙ্গ এড়িয়ে চলে। সমবয়েসী কাওকে আসতে দেখলে দৌড়ে ঘরে ঢুকে যায়। 

ব্যাপারটা বন্ধুদের চোখে পড়তে সময় লাগল না। এককান দুকান করে মোটামুটি সবার কাছেই বিষয়টা চাউর হয়ে গেল। একদিন বন্ধুরা এসে হাজির। পালানোর উপায় নেই দেখে বেচারা কাঁচুমাচু মুখে বেরিয়ে এল। অন্যসময় বন্ধুরা ঘরে এলে, হৈ চৈ বাঁধিয়ে দিত। আসতে না চাইলেও টেনে হিঁচড়ে ঘরে এনে তুলত। মাকে এটাওটা বানাতে বলত। তারপর সবাই মিলে জম্পেশ আড্ডায় ডুব যেত। আজ সবাইকে অবাক করে দিয়ে বন্ধুদের ঠেলে গুঁতিয়ে বাড়ির বাইরে এনে ফেলল। বলল,

-চল বাইরে কোথাও বসি।

হাঁ, এবার বল, এমন ম্যাদা মেরে গেলি কেন? গত কিছুদিন ধরে এমন পালাই পালাই ভাব কেন?

-দোস্ত রে আর বলিস না। না পারি সইতে, না পারি কইতে। তোদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। বিবিবাচ্চা হয়ে গেছে, আমার যে এখনো কিছুই হল না। এদিকে জীবননদীর খরস্রোত শুকিয়ে বালুচর হয়ে যাচ্ছে। 

-কেন তোর কী সমস্যা? ভাল চাকরি করিস। বাড়িগাড়ি আছে। তোর মতো হীরের টুকরো ছেলের জন্য উপযুক্ত পাত্রীরও অভাব নেই। 

-আর বলিস না। সে এক বিরাটা দাস্তান। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি জীবনে বিয়ে করব না। পাকা কথা। এর কোনো নড়চড় হবে না।

-কেন? কী হল?

- আর বলিস না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তোদের সবার আগে আমার বিয়ে হত। এতদিনে আল্লাহর রহমতে কয়েকটা বাচ্চা হয়ে যাওয়াও বিচিত্র কিছু ছিল না। খুলে বললেই বিষয়টা বুঝতে পারবি। ছেলেবেলার খেলার সাথি, আমার খালাত বোনকে বিয়ে করতে চাইলাম। বড় হওয়ার পর তাকে না দেখলেও আমার মনে হত, আমি তাকে যেমন জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ করি, সেও আমাকে অপছন্দ করবে না। আম্মুর কাছে বললাম। আম্মু জানালেন, ছেলেবেলায় তিনি বোনের মেয়েকে দুধ পান করিয়েছেন। সে হিসেবে এই খালাত বোন আমার দুধবোন। আমি লজ্জা পেয়ে তাওবা ইস্তেগফার করে, তাকে মাহরাম হিসেবে দেখতে শুরু করলাম। এখন যেহেতু খালাত বোনের সাথে বিয়ে করা হারাম, তাই তার সাথে দেখা করে তাকে বিয়ে করার কথা চিন্তা করার কারণে, তার কাছ থেকে সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নিলাম। 

মনের দুঃখে কিছুদিন আর বিয়ের প্রসঙ্গ তুললাম না। আমার ফুফু বিদেশ থেকে বেড়াতে এলেন। আমার এক ফুফাত বোন আছে-জিনাত। ছেলেবেলায় সে আমাদের বাড়িতে ছিল। একদিন আম্মুকে একা পেয়ে, তাকে মনের কথা খুলে বললাম। আম্মু বললেন,

-তা কী করে হয়। জিনাত জন্মের পর তোর ফুফু অসুস্থ ছিলেন। তখন জিনাত কিছুদিন আমার কাছে ছিল। তখন সে আমার দুধ পান করেছিল। 

আম্মুর কথা শুনে ক্ষোভে দুঃখে মুষড়ে পড়লাম। লজ্জায় একেবারে মাটিতে মিশে যাওয়ার উপক্রম হল। আমি কেন বারবার এমন হারাম ইচ্ছা করছি? খাস দিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করলাম। জিনাতের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। 


মনে মনে প্রায় ঠিকই করে ফেলেছিলাম, আর বিয়ে করব না। আমাদের গ্রামের বাড়ির এক বন্ধু-খলিল। শহরে আমাদের এপার্টম্যান্টেই একটা ফ্ল্যাটে বাসা ভাড়া নিয়েছে। বন্ধুর বাবা মানে আকরাম চাচা অত্যন্ত ধার্মিক। পুরো পরিবারও তাই। খলিলের একটি বোন আছে-আয়েশা। এখন না দেখলেও ছোটবেলায় দেখেছি। আমাদের বাড়িতে আমার ছোটবোনের সাথে পুতুল খেলতে আসত। মনে মনে আশার প্রাসাদ গড়ে উঠতে শুরু করল। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম, যাক তিনি বোধ হয় এমন সুন্দর একটা মানুষের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করবেন বলেই আগের দুটি ‘ইচ্ছা’ পূরণ করেননি।

আম্মুর কাছে বললাম, তিনি যেন আয়েশার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। আম্মু জিভে কামড় দিয়ে বললেন,

-বাবা, তোর খালি উল্টাপাল্টা প্রস্তাব। আয়েশা তো আমাদের ফাতেমার পিঠাপিঠি। আয়েশার মা আমাদের বাড়িতে গল্প করতে আসতেন। তখন ফাতেমার সাথে আয়েশাকেও কয়েকবার দুধ খাইয়েছি। 


ব্যাস, অনেক হয়েছে। আর নয়। আম্মু যে দুনিয়ার সব মেয়েকে ‘দুধমেয়ে’ বানিয়ে বসে আছেন, এটা আগে জানতে পারলেে এমন হেনস্থা হতে হত না। তাওবা আস্তাগফিরুল্লাহ। বিয়ে করে কী হবে? বিয়ে না করলে বুঝি জীবন অচল হয়ে যাবে? গুল্লি মারি বিয়ের। চিরকুমার থেকে যাবো। 


আমাদের গ্রামে বেশকিছু মোঘল আমলের পুরাকীর্তি আছে। নিয়মিত দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। আমাদের ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে নিয়মিত বিদেশী পর্যটক আমাদের দেশে বেড়াতে আসেন। এবার একদল টুরিস্ট এলেন সুইজারল্যান্ড থেকে। বাবার সাথে একটি মেয়েও এসেছে-সামান্থা। আমরাই তাদের ভ্রমণসূচি ঠিক করেছি। দর্শনীয় স্থানের তালিকায় আমাদের গ্রামের নামও আছে। সেই সুবাদে জিএম সাহেব এই দলের গাইড করার দায়িত্ব আমার কাঁধে ন্যস্ত করলেন। ভালভাবেই সফর শেষ হল। এবার অন্য এলাকায় যাবে দলটি। সামান্থার বাবা আমাদের জিএমকে বললেন, 

-আপনাদের কর্মকর্তার আচার-আচরণ, সৌজন্যবোধ, ভদ্রতা, শিক্ষাদীক্ষা সবই আমার মেয়ের খুব পছন্দ হয়েছে। আমারও হয়েছে। উনি যদি রাজি থাকেন, তাহলে আমার মেয়ে ‘মুসলমান’ হতেও প্রস্তুত। 


যাক, বসের হুকুম পেয়ে আগে প্রতিজ্ঞা ভেঙে মায়ের শরণাপন্ন হলাম। আমার কথা শোনার সাথে সাথে আম্মু বললেন, সামান্থার মায়ের নাম কি ক্লডিয়া?

আমার বুকের রক্ত ছলকে উঠল। না জানি কী হয়? এবার শতভাগের ওপর একহাজার ভাগ নিশ্চিত ছিলাম, এবার আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না। সব অস্থিরতা ভয় জয় করে আম্মুকে বললাম,

-জি, আম্মু। সামান্থার মায়ের নাম ক্লডিয়া।

-আচ্ছা, তাহলে চিনেছি। 

আমার আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। কোথায় সুইজারল্যান্ড আর কোথায় আমাদের দেশ! আম্মু বললেন,

-ছেলেবেলায় সামান্থা যখন দুধের শিশু, তখন ক্লডিয়া মেয়েকোলে আমাদের গ্রাম দেখতে এসেছিল। আমাদের বাড়িতে দুয়েকদিন থেকেও ছিল। তখনই একদিন ক্লডিয়া মেয়েকে রেখে ঘুরতে বেরিয়েছিল। তখন মেয়ের কান্না থামাতে আমি তাকে দুধ পান করিয়েছি। আহ, আমার মেয়েটাকে এতদিন পর দেখব, কল্পনাও করিনি। যা তোর বোনটাকে ঘরে নিয়ে আয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url